বিশ্বের ২০ লাখ প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্তির ঝুঁকিতে

পৃথিবীর ২০ লাখ প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক জরিপের চেছে এই সংখ্যা দ্বিগুণ। এমন তথ্য উঠে এসেছে লুক্সেমবার্গের একদল গবেষকের অনুসন্ধানে। 

গত বুধবার পিএলওএস ওয়ানের (পাবলিক লাইব্রেরি অফ সায়েন্স) এক জার্নালে নতুন এই গবেষণাটি প্রকাশ করা হয়। 

২০১৯ সালে একটি ‘অস্থায়ী অনুমান’ করে জাতিসংঘ বলেছে, ১০ শতাংশ প্রজাতি হুমকির মুখে রয়েছে। উদ্ভিদ ও মেরুদণ্ডী প্রাণীর প্রজাতির বিলুপ্তি নিয়ে বিজ্ঞানীরা এর আগে নানা তথ্য প্রকাশ করে। তবে অসংখ্য কীটপতঙ্গের প্রজাতি সম্পর্কে সঠিক তথ্যের সংকট সব সময় দেখা দেয়। ২০১৯ এর পর থেকে কীটপতঙ্গ নিয়ে বিভিন্ন ডেটা সংগ্রহ শুরু হয়। এই ডেটার মাধ্যমে আগের অনুমান থেকে বিলুপ্তির ঝুঁকির অনুপাত অনেক বেশি জানা যায়। কারণ পৃথিবী অসংখ্য কীটপতঙ্গের প্রজাতি রয়েছে, যেগুলো আগের জরিপে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। 

লুক্সেমবার্গের মিউজী ন্যাশনাল ডি’হিস্টোয়ার নেচারেল গবেষণাপত্রের প্রধান অ্যাক্সেল হোককার্শ বলেন, অন্যান্য বর্গের প্রাণীর মত কীটপতঙ্গও বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে, তা এই গবেষণায় উঠে এসেছে। কারণ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি প্রজাতি বৈচিত্র্য পাওয়া যায় কীটপতঙ্গের মধ্যে। তাই এ তথ্যটি সবার সমানে আসা উচিত। 

বিশ্বের ৯৭ শতাংশ প্রাণী অমেরুদণ্ডী। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ হল কীটপতঙ্গ। ফসলের পরাগায়ন, বর্জ্য পচন ও মাটিতে পুষ্টির পুনর্ব্যবহারের জন্য পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কীটপতঙ্গ। হোককার্শ বলেছেন, এসব কীটপতঙ্গ ছাড়া পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হবে। 

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার বা আইইউসিএনের লাল তালিকাভুক্ত ঝুঁকিপূর্ণ প্রজাতিগুলো পর্যবেক্ষণ করেন গবেষক দলটি। এটি ঝুঁকিপূর্ণ প্রজাতির তথ্যের সবচেয়ে বড় উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। দলটি দেখতে পান, ইউরোপীয় প্রজাতির এক পঞ্চমাংশ বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে, ২৪ শতাংশ অমেরুদণ্ডী প্রাণীর পাশাপাশি উদ্ভিদের ২৭ শতাংশ এবং মেরুদণ্ডী প্রাণীদের ১৮ শতাংশ ঝুঁকিতে রয়েছে। 

বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা বিশ্বের মোট প্রজাতির সংখ্যা অনুমান করতে এসব ডেটা কাজে লাগানো হয়। কীটপতঙ্গের হিসাব ছাড়া ২০১৯ সালের জাতিসংঘের ইন্টারগভারনমেন্টাল সায়েন্স–পলিসি প্ল্যাটফর্ম অন বায়োডাইভার্সিটি অ্যান্ড ইকোসিস্টেমের (আইপিবিইএস) অনুমান প্রায় একই ছিল। 

আইপিবিইএসের নির্বাহী সম্পাদক অ্যান লারিগাউডেরি বলেন, দ্বিতীয় গ্লোবাল অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট ২০২৮ সালে প্রকাশ পাবে। এই প্রতিবেদনে তথ্য আপডেট ও বর্ধিত করা হবে। তিনি বলেন, জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতির অবদান এমন হারে কমছে, যা মানব ইতিহাসে আগে কখনো দেখা যায়নি। 

বেশির ভাগ প্রজাতি বিলুপ্তির কারণ- মানুষের কর্মকাণ্ড। চাষাবাদের বিস্তারের ফলে প্রাকৃতিক আবাসস্থলের ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া প্রাকৃতিক সম্পদের অত্যাধিক শোষণ ও দূষণ এবং আবাসিক ও বাণিজ্যিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রজাতি আজ হুমকির মুখে। 

হোককার্শ বলেন, অনেক বেশি সংখ্যক প্রজাতির বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে তা এই গবেষণায় জানা যায়। তিনি এই বিলুপ্তি ঠেকাতে সংরক্ষণমূলক পদক্ষেপের কার্যকারিতা তুলে ধরেন। এজন্য নেকড়ে, লিংকস (একধরণর বনবিড়াল), ভালুক ও সাদা-লেজের  ইগলের মতো বড় শিকারিদের সংখ্যা পুরো ইউরোপজুড়ে বাড়াতে হবে। যখনই সংরক্ষণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তখন প্রজাতির বিলুপ্তির সংখ্যা কমে যেতে দেখা যায়।

সূত্র- দ্য গার্ডিয়ান।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //